Dhaka , Friday, 11 October 2024
www.dainikchalonbilerkotha.com

পেঁয়াজ আবাদে ব্যস্ত পাবনার কৃষকরা

 

নিউজ ডেস্ক দৈনিক চলনবিলের কথা

গত বছর পেঁয়াজচাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এবার আবার পেঁয়াজ লাগানোর উৎসবে মেতেছেন পাবনার চাষিরা। তবে তারা শঙ্কিত সরকার এ বছরও পেঁয়াজ আমদানি করে কি না! আর সেটি করা হলে তারা চরম ক্ষতির শিকার হবেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

পাবনা জেলার কয়েকটি উপজেলার চাষিরা এখন হালি (চারা) পেঁয়াজ চাষে মহাব্যস্ত। এবার পেঁয়াজ চাষ কিছুটা কম হওয়ায় চাষিরা লাভবান হতে পারেন বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার পাবনা জেলায় ৪৪ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে চারা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৪৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সাঁথিয়া উপজেলায় ১৬ হাজার ৯৭০ হেক্টরে দুই লাখ ৩৮ হাজার টন, সুজানগরে ২০ হাজার হেক্টরে দুই লাখ ৮৪ হাজার টন, বেড়ায় তিন হাজার হেক্টরে ৪২ হাজার টন,পাবনা সদরে পাঁচ হাজার হেক্টরে ৭০ হাজার টন, ঈশ্বরদীতে এক হাজার ৫০০ হেক্টরে ২১ হাজার টন, চাটমোহরে এক হাজার ৫০০ হেক্টরে সাড়ে ২১ হাজার টন, ভাঙ্গুড়ায় এক হাজার ৫৩০ হেক্টরে ২১ হাজার ৪২০ টন, আটঘরিয়ায় এক হাজার হেক্টর জমিতে ১৪ হাজার টন ও ফরিদপুরে এক হাজার ৫০০ হেক্টরে সাড়ে ২১ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

পাবনা জেলার পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর পেঁয়াজ চাষে ক্ষতির শিকার হওয়ায় চাষিরা এবার পেঁয়াজ আবাদ কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন। এ জন্য এ বছর পাবনায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত নাও হতে পারে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রতিবছর পেঁয়াজের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে পাবনা জেলা থেকেই উৎপাদন হয় প্রায় সাত লাখ মেট্রিক টন যা মোট উৎপাদনের এক চতুর্থাংশের বেশি। আর পাবনা জেলার সাঁথিয়া-সুজানগর উপজেলা থেকে উৎপাদন হয় প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। সে হিসাবে সারাদেশে মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের এক পঞ্চমাংশ উৎপাদিত হয় পাবনার এ দুটি উপজেলা থেকে।

পাবনা জেলার সাঁথিয়া, সুজানগর ও বেড়া উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায় এলাহী কাণ্ড। চরম শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে এলাকার শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষ পেঁয়াজের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাড়ির নারীরাও পুরুষ সদস্যদের কাজে সহায়তা করছেন।

দেশের অন্যতম বড় পেঁয়াজের হাট পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার বনগ্রাম হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি মণ কন্দ পেঁয়াজ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে চাষিরা কিছুটা লাভবান হচ্ছেন।

হাটের আড়তদাররা জানান, এবার কন্দ পেঁয়াজের বাজারে সুবাতাস বইছে। তিন মাসের মধ্যে নতুন হালি পেঁয়াজ হাটে উঠতে শুরু করবে। তখন কাঁচা অবস্থায় পেঁয়াজের দর ভালো থাকলে চাষিরা লাভবান হবেন।

সাঁথিয়া উপজেলার গৌরিগ্রাম, ঘুঘুদহ, বন্দিরামচর, মটকা, কুমিরগাড়ী, বামনডাঙ্গা গ্রামের মাঠে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে হলে শুরুতেই পেঁয়াজ বীজ কেনা, চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলা ভাড়া করতে হয়। জমি চাষ, সেচ, সার, গোবর, নিড়ানি, শ্রমিক ও উত্তোলন খরচ মিলিয়ে বিঘাপ্রতি প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। এর পাশাপাশি যারা অন্যের জমি লিজ নিয়ে আবাদ করেন তাদের বিঘা প্রতি বাৎসরিক ১০ হাজার টাকা লিজমানি জমি মালিককে দিতে হয়। এজন্য তাদের খরচ হয় আরো বেশি। এছাড়া অনেক ছোট-বড় চাষি চড়া সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েও পেঁয়াজচাষ করেন।

চাষিরা জানান, গত এক বছরের মধ্যে জ্বালানি তেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাষের খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। কিন্তু সে তুলনায় তারা ফসলের দাম পাচ্ছেন না। এতে বহু চাষি পেঁয়াজ আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে সরেষ বা গমের আবাদ করেছেন।

তারা বলেন, দেশে সব কিছুর দাম বাড়ছে, জনগণের আয় বাড়ছে। তাই মসলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজের দামও প্রতিবছর বাড়লেই কেবল চাষিরা লাভবান হতে পারবেন। পৈত্রিক পেশা আর তাদের অন্য কিছু করার নেই তাই তারা পেঁয়াজ আবাদে রয়েছেন। কিন্তু প্রতি বছরই ক্ষতি হলে তারা আর এ আবাদ ধরে রাখতে পারবেন না।

বাংলাদেশ ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) কেন্দ্রীয় সভাপতি ও পাবনা জেলার বিশিষ্ট চাষি আলহাজ্ব শাহজাহান আলী বাদশা জানান, গতানুগতিক বীজের বদলে উফশী (উচ্চ ফলনশীল) জাত চাষি পর্যায়ে সম্প্রসারিত হলে পেঁয়াজচাষি ও ভোক্তা উভয়েই উপকৃত হবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পাবনার প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনও বাড়ছে। উন্নত জাতও উদ্ভাবিত হয়েছে। তবে সেগুলো দীর্ঘ মেয়াদে পরীক্ষা, নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করতে হয়। চাষি পর্যায়ে পৌঁছাতে সঙ্গত কারণেই সময় লেগে যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পাবনার প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম আরো জানান, আবহাওয়া ভালো থাকলে ও উৎপাদন ভালো হলে চাষিরা লাভবান হবেন বলে তারা আশাবাদী।

Popular Post

পেঁয়াজ আবাদে ব্যস্ত পাবনার কৃষকরা

আপডেটের সময় 02:12 pm, Tuesday, 10 January 2023

 

নিউজ ডেস্ক দৈনিক চলনবিলের কথা

গত বছর পেঁয়াজচাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এবার আবার পেঁয়াজ লাগানোর উৎসবে মেতেছেন পাবনার চাষিরা। তবে তারা শঙ্কিত সরকার এ বছরও পেঁয়াজ আমদানি করে কি না! আর সেটি করা হলে তারা চরম ক্ষতির শিকার হবেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

পাবনা জেলার কয়েকটি উপজেলার চাষিরা এখন হালি (চারা) পেঁয়াজ চাষে মহাব্যস্ত। এবার পেঁয়াজ চাষ কিছুটা কম হওয়ায় চাষিরা লাভবান হতে পারেন বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার পাবনা জেলায় ৪৪ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে চারা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৪৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সাঁথিয়া উপজেলায় ১৬ হাজার ৯৭০ হেক্টরে দুই লাখ ৩৮ হাজার টন, সুজানগরে ২০ হাজার হেক্টরে দুই লাখ ৮৪ হাজার টন, বেড়ায় তিন হাজার হেক্টরে ৪২ হাজার টন,পাবনা সদরে পাঁচ হাজার হেক্টরে ৭০ হাজার টন, ঈশ্বরদীতে এক হাজার ৫০০ হেক্টরে ২১ হাজার টন, চাটমোহরে এক হাজার ৫০০ হেক্টরে সাড়ে ২১ হাজার টন, ভাঙ্গুড়ায় এক হাজার ৫৩০ হেক্টরে ২১ হাজার ৪২০ টন, আটঘরিয়ায় এক হাজার হেক্টর জমিতে ১৪ হাজার টন ও ফরিদপুরে এক হাজার ৫০০ হেক্টরে সাড়ে ২১ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

পাবনা জেলার পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর পেঁয়াজ চাষে ক্ষতির শিকার হওয়ায় চাষিরা এবার পেঁয়াজ আবাদ কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন। এ জন্য এ বছর পাবনায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত নাও হতে পারে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রতিবছর পেঁয়াজের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে পাবনা জেলা থেকেই উৎপাদন হয় প্রায় সাত লাখ মেট্রিক টন যা মোট উৎপাদনের এক চতুর্থাংশের বেশি। আর পাবনা জেলার সাঁথিয়া-সুজানগর উপজেলা থেকে উৎপাদন হয় প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। সে হিসাবে সারাদেশে মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের এক পঞ্চমাংশ উৎপাদিত হয় পাবনার এ দুটি উপজেলা থেকে।

পাবনা জেলার সাঁথিয়া, সুজানগর ও বেড়া উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায় এলাহী কাণ্ড। চরম শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে এলাকার শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষ পেঁয়াজের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাড়ির নারীরাও পুরুষ সদস্যদের কাজে সহায়তা করছেন।

দেশের অন্যতম বড় পেঁয়াজের হাট পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার বনগ্রাম হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি মণ কন্দ পেঁয়াজ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে চাষিরা কিছুটা লাভবান হচ্ছেন।

হাটের আড়তদাররা জানান, এবার কন্দ পেঁয়াজের বাজারে সুবাতাস বইছে। তিন মাসের মধ্যে নতুন হালি পেঁয়াজ হাটে উঠতে শুরু করবে। তখন কাঁচা অবস্থায় পেঁয়াজের দর ভালো থাকলে চাষিরা লাভবান হবেন।

সাঁথিয়া উপজেলার গৌরিগ্রাম, ঘুঘুদহ, বন্দিরামচর, মটকা, কুমিরগাড়ী, বামনডাঙ্গা গ্রামের মাঠে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে হলে শুরুতেই পেঁয়াজ বীজ কেনা, চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলা ভাড়া করতে হয়। জমি চাষ, সেচ, সার, গোবর, নিড়ানি, শ্রমিক ও উত্তোলন খরচ মিলিয়ে বিঘাপ্রতি প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। এর পাশাপাশি যারা অন্যের জমি লিজ নিয়ে আবাদ করেন তাদের বিঘা প্রতি বাৎসরিক ১০ হাজার টাকা লিজমানি জমি মালিককে দিতে হয়। এজন্য তাদের খরচ হয় আরো বেশি। এছাড়া অনেক ছোট-বড় চাষি চড়া সুদে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েও পেঁয়াজচাষ করেন।

চাষিরা জানান, গত এক বছরের মধ্যে জ্বালানি তেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাষের খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। কিন্তু সে তুলনায় তারা ফসলের দাম পাচ্ছেন না। এতে বহু চাষি পেঁয়াজ আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে সরেষ বা গমের আবাদ করেছেন।

তারা বলেন, দেশে সব কিছুর দাম বাড়ছে, জনগণের আয় বাড়ছে। তাই মসলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজের দামও প্রতিবছর বাড়লেই কেবল চাষিরা লাভবান হতে পারবেন। পৈত্রিক পেশা আর তাদের অন্য কিছু করার নেই তাই তারা পেঁয়াজ আবাদে রয়েছেন। কিন্তু প্রতি বছরই ক্ষতি হলে তারা আর এ আবাদ ধরে রাখতে পারবেন না।

বাংলাদেশ ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) কেন্দ্রীয় সভাপতি ও পাবনা জেলার বিশিষ্ট চাষি আলহাজ্ব শাহজাহান আলী বাদশা জানান, গতানুগতিক বীজের বদলে উফশী (উচ্চ ফলনশীল) জাত চাষি পর্যায়ে সম্প্রসারিত হলে পেঁয়াজচাষি ও ভোক্তা উভয়েই উপকৃত হবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পাবনার প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনও বাড়ছে। উন্নত জাতও উদ্ভাবিত হয়েছে। তবে সেগুলো দীর্ঘ মেয়াদে পরীক্ষা, নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করতে হয়। চাষি পর্যায়ে পৌঁছাতে সঙ্গত কারণেই সময় লেগে যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পাবনার প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম আরো জানান, আবহাওয়া ভালো থাকলে ও উৎপাদন ভালো হলে চাষিরা লাভবান হবেন বলে তারা আশাবাদী।