ভরা চলনবিল মাছ শূন্য
নিজস্ব প্রতিবেদক দৈনিক চলনবিলের কথা
বিশাল জলসম্পদে সমৃদ্ধ। সারাদেশ জুড়ে রয়েছে অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় ও পুকুর।মৎস্য উৎপাদনের বিস্তৃত ক্ষেত্র পড়ে আছে এ দেশের সর্বত্র। তাতে রয়েছে অসংখ্য প্রজাতির মাছ। এ সব মাছ সুস্বাদু ও সহজপাচ্য। মাছ তাই বাঙালিদের কাছে অতি প্রিয়। মাছ আর ভাত ছাড়া বাঙালির খাবার মনঃপূত হয় না। তার তৃপ্তি মেটে না। বাঙালির খাদ্যে মাছ এবং ভাতেরই প্রাধান্য। অনাদিকাল থেকে মাছ এবং ভাতের উপর বাঙালিদের নির্ভরতার কারণে এ দেশের মানুষের পরিচয় হয়েছে ‘মাছে ভাতে বাঙালি’।
আষাঢ়, শ্রাবন বিলে পানি না থাকায় মাছ ধরতে পারেননি পানি না থাকার কারণে। উপার্জন বন্ধ ছিল। সংসার চালিয়েছেন ধারদেনা করে। যখন বিল ভর্তি পানি, খুব আশা নিয়ে জেলেরা জাল নিয়ে নৌকা ভাসালেন বিলে, ফেললেন জাল। কিন্তু ভরা বিল যে মাছ শূন্য!
বিভিন্ন ধরনের জাল ফেললেও মিলছে না মাছের দেখা।মাছ না পেয়ে হতাশার কথা শোনালেন পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলার চলনবিল অঞ্চলের জেলে কুদ্দুস মিয়া। তিনি ভেবে পাচ্ছেন না, এখন তার সংসার চলবে কীভাবে, ধারের টাকাই-বা কীভাবে শোধ করবেন?
কুদ্দুস মিয়া বলেন, অন্যসব বছরে পানি যে রকমই থাকুক কম বেশি মাছ ধরা পড়তো। এ বছরে জেলেরা কাঙ্ক্ষিত মাছ পাচ্ছেন না। অথচ বিলে পানিতে ভরপুর। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকালয়েও প্রবেশ করছে। ডুবে যাচ্ছে ঘরবাড়িসহ ফসলের জমি। আক্ষেপ করে কুদ্দুস বলেন, বিল এখ কৃপণ হয়ে গেছে! না হলে ভরা বিলে মাছ পাওয়া যাবে না কেন?
জানা গেছে, প্রতি বছরে সরকারী সহায়তায় মৎস অধিদপ্তের মাধ্যমে মাছের পোনা ছেড়ে দেওয়া হতো। তবে এ বছরে সরকারি প্রজেক্টের মাধ্যমে বিলে কোন পোনা ছাড়া হয়নি ।
নাটোরের চলনবিল এলাকার মোঃ ইউনুস আলী বলেন, সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত করোনা ঝুঁকি নিয়ে মাছ শিকারে গিয়েছেন। কিন্তু লাভ হয়নি।এতে দিশেহারা তারা! ঋনের টাকা তাদের জন্য বিষফোঁড়া। রয়েছে বিভিন্ন এনজিও ব্যাংকের কিস্তি পাওনাদারদের চাপ। অন্যান্য বছর এ সময় জেলেরা বিল থেকে নৌকা ভর্তি মাছ নিয়ে বিক্রি করতেন আড়তে। আড়তে মাছ রাখামাত্র শুরু হতো হাঁক-ডাক। বেচাকেনায় সরগরম থাকত মহিষলুটি মৎস আড়তে।
মহিষলুটির আড়ৎদার আঃ মান্নান বলেন, প্রত্যাশিত পরিমাণে মাছ না পাওয়ায় মাছের বাজার আগুন। যে কারণে মাছে ভাতে বাঙ্গালী বললেও ভালো মাছ সাধারণ মানুষের ভাগ্য জুটছে না। সে কারণে মাছের দামও কমেনি।
সিরাজ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, দু-মাস পানি না থাকার কারণে ছোট পোনা মাছগুলো সব চায়না জালে ধরা পরেছে হয়তো এরকমই কিছু ঘটেছে , এই জন্য বিলে পানি বেশি হওয়ায় জেলেরা প্রত্যাশিত মাছ পাচ্ছেন না। তবে আমরা বিলে পোনা ছাড়ার বিষয়ে প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি, সামনে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রচুর মাছের পোনা ছাড়া হবে, তবে মাছ ধরতে আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।