Dhaka , Friday, 19 April 2024
www.dainikchalonbilerkotha.com

প্রতিবন্ধী মিজানুরকে ভাঙ্গুড়া ইউএনও’র ফুলেল শুভেচ্ছা

 

নিউজ ডেস্ক দৈনিক চলনবিলের কথা

১৯৮৮ সালে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মিজানুর রহমান। খুব শখ ছিল ঘুড়ি উড়ানোর। সে সময় পঞ্চম শ্রেণীতে থাকাকালীন একদিন সকালে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলেন মিজানুর। হঠাৎ বিদ্যুতের তারে আটকে যায় তার শখের ঘুড়িটি। ঘুরিটি বৈদ্যুতিক খুঁটি বেয়ে নামাতে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আটকে পড়েন বিদ্যুতের তারে। পরে চিকিৎসায় জীবন বেঁচে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে কেটে ফেলতে হয় তার বাম হাত ও বাম পা। তারপর দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থেকে সুস্থ হন। তবে শখের ঘুড়িই তাঁর দুটি অঙ্গহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বলছি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের মাদারবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল জব্বার ফকিরের ছেলে মিজানুর রহমানের কথা। তাঁর বয়স এখন ৫৩ বছর। দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে তিনি বাস করছেন খানমরিচ ইউনিয়নের চণ্ডীপুর গ্রামে। রাস্তার পাশে ছোট্ট একটা ঝুপড়ি ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমানের বসবাস। দারিদ্র্যের মধ্যে কাটছে মিজানুর রহমানের জীবন। সরকারিভাবে পান প্রতিবন্ধী ভাতা। চার ছেলে ও তিন মেয়ের জনক তিনি। বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, বাকিরা এখনো সবাই ছোট। সহায়-সম্বলহীন অসহায় প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান অবশেষে পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর।

গত বুধবার (১৫ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে তুলে দিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান। ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তার পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন জামাকাপড় উপহার দেন তিনি। এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিপাশা হোসাইন, খানমরিচ ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন খান মিঠু, স্থানীয় ইউপি সদস্য রওশন আলী, সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য জাহানারাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। পরে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে বৃক্ষ রোপন করা হয়।

মিজানুর রহমানকে নিয়ে প্রথম সংবাদ প্রকাশ করা খানমরিচ ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং উপজেলার পরমানন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান সবুজ মাষ্টার বলেন, মিজানুরের দুঃসহ জীবনের সংবাদ প্রকাশের পরই তাৎক্ষণিক খোঁজ খবর নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান স্যার। তখন থেকেই নিয়মিত মিজানুরের খোঁজ খবর রাখছেন বলেও জানান তিনি।

খানমরিচ ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন খান মিঠু বলেন, ধান ও শস্যের মৌসুমে ঘোড়ার গাড়িতে কৃষিপণ্য পরিবহন করে সংসার চালান প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান। বেঁচে থাকার তাগিদে এক হাত আর এক পা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে তাঁর জীবন-সংগ্রাম।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান দৈনিক চলনবিলের কথা কে জানান,
মাদারবাড়ীয়ার আলোচিত মিজানুর রহমানের কথা শুনার পর একাধিকবার সরাসরি দেখা ও কথা বলেছি। ভাঙ্গুড়ায় ইউএনও হিসেবে যোগদানের পর তার খোঁজ খবর নিয়েছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়।

ইউএনও মোহাম্মদ নাহিদ হাসান আরো বলেন, অপেক্ষার অবসান হচ্ছে মিজানুর-ফাতেমা দম্পতির।
আগামী বুধবার (২২ মার্চ) আনুষ্ঠানিকভাবে ৪র্থ পর্যায়ে ভূমিহীনদের মাঝে গৃহ প্রদান কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৪র্থ পর্যায়ে ভূমিহীনদের মাঝে গৃহ প্রদান অনুষ্ঠানেই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাচ্ছেন প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান। আর রাস্তায় ডেরা পেতে থাকতে হবেনা মিজানুর ও তাঁর পরিবারকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারই এই সব অসহায় মানুষের জীবনের বড় অনুপ্রেরনা। জরাজীর্ণ জীবন থেকে একটি ছিমছাম ও সাজানো জীবন ফিরে পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

প্রতিবন্ধী মিজানুরকে ভাঙ্গুড়া ইউএনও’র ফুলেল শুভেচ্ছা

আপডেটের সময় 04:36 pm, Thursday, 16 March 2023

 

নিউজ ডেস্ক দৈনিক চলনবিলের কথা

১৯৮৮ সালে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মিজানুর রহমান। খুব শখ ছিল ঘুড়ি উড়ানোর। সে সময় পঞ্চম শ্রেণীতে থাকাকালীন একদিন সকালে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলেন মিজানুর। হঠাৎ বিদ্যুতের তারে আটকে যায় তার শখের ঘুড়িটি। ঘুরিটি বৈদ্যুতিক খুঁটি বেয়ে নামাতে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আটকে পড়েন বিদ্যুতের তারে। পরে চিকিৎসায় জীবন বেঁচে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে কেটে ফেলতে হয় তার বাম হাত ও বাম পা। তারপর দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থেকে সুস্থ হন। তবে শখের ঘুড়িই তাঁর দুটি অঙ্গহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বলছি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের মাদারবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল জব্বার ফকিরের ছেলে মিজানুর রহমানের কথা। তাঁর বয়স এখন ৫৩ বছর। দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে তিনি বাস করছেন খানমরিচ ইউনিয়নের চণ্ডীপুর গ্রামে। রাস্তার পাশে ছোট্ট একটা ঝুপড়ি ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমানের বসবাস। দারিদ্র্যের মধ্যে কাটছে মিজানুর রহমানের জীবন। সরকারিভাবে পান প্রতিবন্ধী ভাতা। চার ছেলে ও তিন মেয়ের জনক তিনি। বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, বাকিরা এখনো সবাই ছোট। সহায়-সম্বলহীন অসহায় প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান অবশেষে পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর।

গত বুধবার (১৫ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে তুলে দিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান। ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তার পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন জামাকাপড় উপহার দেন তিনি। এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিপাশা হোসাইন, খানমরিচ ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন খান মিঠু, স্থানীয় ইউপি সদস্য রওশন আলী, সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য জাহানারাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। পরে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে বৃক্ষ রোপন করা হয়।

মিজানুর রহমানকে নিয়ে প্রথম সংবাদ প্রকাশ করা খানমরিচ ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং উপজেলার পরমানন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান সবুজ মাষ্টার বলেন, মিজানুরের দুঃসহ জীবনের সংবাদ প্রকাশের পরই তাৎক্ষণিক খোঁজ খবর নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান স্যার। তখন থেকেই নিয়মিত মিজানুরের খোঁজ খবর রাখছেন বলেও জানান তিনি।

খানমরিচ ইউপি চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন খান মিঠু বলেন, ধান ও শস্যের মৌসুমে ঘোড়ার গাড়িতে কৃষিপণ্য পরিবহন করে সংসার চালান প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান। বেঁচে থাকার তাগিদে এক হাত আর এক পা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে তাঁর জীবন-সংগ্রাম।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান দৈনিক চলনবিলের কথা কে জানান,
মাদারবাড়ীয়ার আলোচিত মিজানুর রহমানের কথা শুনার পর একাধিকবার সরাসরি দেখা ও কথা বলেছি। ভাঙ্গুড়ায় ইউএনও হিসেবে যোগদানের পর তার খোঁজ খবর নিয়েছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়।

ইউএনও মোহাম্মদ নাহিদ হাসান আরো বলেন, অপেক্ষার অবসান হচ্ছে মিজানুর-ফাতেমা দম্পতির।
আগামী বুধবার (২২ মার্চ) আনুষ্ঠানিকভাবে ৪র্থ পর্যায়ে ভূমিহীনদের মাঝে গৃহ প্রদান কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৪র্থ পর্যায়ে ভূমিহীনদের মাঝে গৃহ প্রদান অনুষ্ঠানেই প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাচ্ছেন প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান। আর রাস্তায় ডেরা পেতে থাকতে হবেনা মিজানুর ও তাঁর পরিবারকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারই এই সব অসহায় মানুষের জীবনের বড় অনুপ্রেরনা। জরাজীর্ণ জীবন থেকে একটি ছিমছাম ও সাজানো জীবন ফিরে পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।