নিজস্ব প্রতিবেদক দৈনিক চলনবিলের কথা
সিরাজগঞ্জ জেলাধীন যমুনা নদী বিধ্বস্ত চৌহালী উপজেলার উমারপুর ইউনিয়নের পয়লা গ্রামের দিনমজুর শুকুর আলীর মেয়ে তাসলিমা আক্তার। চার ভাই-বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। পড়াশুনায় ভাল হলেও টাকার অভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর বিএ ক্লাশে ভর্তি হওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি। ২০১৬ সালে ইউএসএআইডি ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে কেয়ার বাংলাদেশের কারিগরি সহযোগিতায় এনডিপি বাস্তবায়নাধীন সৌহার্দ্য ৩ কর্মসূচির খানা নং- ০০১৩ , অতিগরিব সদস্য হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় তাদের এই পরিবার। যুব ও কিশোরীদের বিভিন্ন সচেতনতামূলক সেশনে তাসলিমা অংশগ্রহণ করে বাল্যবিবাহের কুফল, কিশোরীদের টিটি টিকা, আয়রন, ফলিক এসিড সেবন, কর্মমুখী শিক্ষা সম্পর্কে অবগত হয়। বাবা মা পড়াশুনার টাকার যোগান দিতে পারবেনা বলে মেয়েকে বাল্যবিবাহ দেয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু মেয়ের অমতে সেটা সম্ভব হয়নি।
গতবছর সৌহার্দ্য ৩ কর্মসুচির ১০ দিনের ‘ছাগল পালন ও খামার ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। প্রশিক্ষণ শেষে প্রাপ্ত ৩৫০০ টাকা ও ২০০০ টাকা বাবা মায়ের কাছ থেকে নিয়ে গ্রাম থেকে উন্নতমানের দেশী ১ টি গর্ভবতী মা ছাগল ক্রয় করে। ক্রয় করার ১ মাসের মধ্যেই ছাগলটি ১টি পাঠা ও ২ টি পাঠি ছাগলের বাচ্চা জন্ম দেয়।
পরবর্তীতে পাঠা ছাগলকে খাসিকরণ করা হয় । আর পাঠি ছাগলটি মা হতে চলেছে। ছাগলগুলোকে ভিডিসি কমিটির উদ্যোগে প্রাণিসম্পদ বিভাগের মাধ্যমে টিকা প্রদান করা হয়েছে। বন্যা সময়কালীন আরো ১ টি পাঠি ছাগলের জন্ম হয়েছে। বর্তমানে তাসলিমার ছাগলের সংখ্যা ৫ টি। যার বর্তমান আনুমানিক বাজার মূল্য ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
বন্যা পূর্ববর্তী সময়ে সৌহার্দ্য ৩ কর্মসূচি’র সহায়তায় বসতভিটা উঁচু করার ফলে বাড়িতে সবজি উৎপাদন করারও সুযোগ হয়। জৈব সার প্রয়োগ করে উন্নত বীজ সংগ্রহ করে বসতভিটার খালি জায়গা সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে চাল কুমড়া, ধুন্দল, পুঁই শাক, ঢেড়শ, বেগুন, কচু, ধান মরিচ ইত্যাদি শাক-সবজি উৎপাদন করে পরিবারের চাহিদা পূরণ করেও প্রায় ২ হাজার টাকার সবজি বিক্রয় করেছে। পুনরায় শীতকালীন সবজি উৎপাদনে ব্যস্ত তাসলিমা। তার ভাষ্যমতে – “আমি ছাগল বিক্রি করছি না এ কারনে যে, কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ টি ছাগলের একটি খামার করতে আমি এই শ্রম দিয়ে যাচ্ছি। এবছর বিএ ক্লাশে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার ঐকান্তিক ইচ্ছা প্রকাশ করছি। সৌহার্দ্য ৩ কর্মসূচি’র এফটি- গভর্নেন্স এন্ড ইয়ুথ হান্নান মোরশেদের অনুপ্রেরণা ও পরামর্শে অতি সাম্প্রতিক পয়লা কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করার সুযোগও আমার হয়েছে। গ্রামের অন্য যুব ও কিশোরীদেরকেও পরিশ্রম করে স্বাবলম্বী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আমি এখন খুব খুশি একারনে যে, অনেক বেকার যুব , কিশোর- কিশোরী আমার কাছে পরামর্শের জন্য আসে। বর্তমানে সমাজে আমার গ্রহনযোগ্যতা বেড়েছে। আমি পরিশ্রম করে আমার পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চাই এবং আমার দরিদ্র পিতা-মাতার পাশে থেকে আমার ছোট ভাই বোনদের পড়াশুনা সচল করতে চাই।”
All rights reserved Dainik chalonbiler kotha দৈনিক চলনবিলের কথা © ২০২২||
এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।