আমার মৃত্যুর পরে শুধু একবার এসো।
এসো শেষবারের মতো তুমি।
লোবানের গন্ধ ছুঁয়ে ছুঁয়ে তুমি কেঁদো।
আমায় আর ফিরে না পাবার দ্রোহে,
ভীষণ শূন্যতার ছায়া ঘরে দীর্ঘশ্বাস চাপা দিও।
আমার খাটিয়ার খুব কাছাকাছি থেকো,
আমায়ও তোমার গন্ধখানি পেতে দিও।
বহুদিন তোমার বিরহের গন্ধ মেখে মেখে,
আমি বিবর্ণ হয়ে গেয়েছি।
এই শেষ বেলায় তুমি আমার কাছাকাছিই থেকো।
কত কত জন আমার কাফনের নেকাব খুলে,
আমার মুখখানি দেখবে,
আফসোসে চোখের জলে ভাসবে।
তুমিও বার কয়েক দেখে নিও,
একটু দূরে দাঁড়িয়ে আরচোখে ;
দেখো নিও নিথর আমায়!
আমার শিরা উপশিরা গুলো নিরব নির্বাক,
আমার আর কোনও কষ্ট নেই,
অভিমান কিংবা অনুযোগ নেই।
তুমি নিশ্চিন্তে এসো,
এসো আমার জীবনের শেষ বিদায়ী উৎসবে।
আমার ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া মুখের কার্নিশে,
তৃষ্ণায় কুঁকড়ে যাওয়া ঠোঁটের শীতল চিঠিতে;
তোমার নামে লেখা শেষ শব্দটা তুলে নিও।
তুলে নিও তোমার বুকের অনাগ্রহী ব্যাক পকেটে,
“ভালোবাসি “।
আমার যে চোখে তুমি মায়াময় দিঘির অনুরণন দেখে, নিজেকে সমর্পিত করেছিলে একদিন।
সেই চোখ দু’টো আজ কেমন,
সময়ের ভুল বানানে অবরুদ্ধ।
তাইতো পালটে গেছে আমার চোখের সমস্ত বায়োগ্রাফি।
পাপড়ি ঢেকেছে শ্বাশত প্রেম আমার।
তোমার প্রণয় প্রক্ষেপণে আমার গালে যে লালিমার মহোৎসব চলত,
তোমার আদুরে আঙ্গুল যেখানে অনুরাগের উষ্ণতা পরিমাপ করত অনায়াসে!
আজ তা কেমন রক্তশূন্য হয়ে বিধাতার আশ্চর্যজনক শীতলতায় প্রাণহীন।
তবুও তুমি এসো,
শেষ বারের মতো এসো তুমি।
যে দুধসাদা আদুরে আঙ্গুলের স্পর্শ পেতে,
তুমি যোজন যোজন দূরত্ব অতিক্রম করে আমার ছায়ার সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকতে নিরবধি।
সেই আমার আজ আর কোনও ছায়া নেই,
নেই তোমার আঙ্গুলের ভাঁজে আমার মায়াবী শৃঙ্খল।
তুমি কাঁদছ?
কাঁদো।
লোকচক্ষুর অন্তরালে তোমার বুকের দহনের নোনা অনুতাপ আড়াল করার জন্য,
বিকেলের নরম রোদেও তোমার চোখে কালোগ্লাসের বোরখা পরিহিত,
আমি তোমায় খুব করে দেখতে পাচ্ছি,
কেমন বীভৎস অনুতাপে পুড়ছে তোমার হৃদয় জমিন।
লোবানের গন্ধে জ্বালা করছে তোমার নাসারন্ধ্র,
আতরের গন্ধ আমি বরাবরই সহ্য করতে পারতাম না,
তুমিও।
অথছ আজ তুমি আমি কেমন আতরের গন্ধ মেখে কাছাকাছি।
কতবার তুমি কথা দিয়েছিলে,
ওপরেও আমার সাথেই থাকবে।
কীভাবে থাকবে!
এপারেই যে তুমি আমায় ছেড়ে অন্য কারও,
অন্য জনে, অন্য মনে বসত তোমার।
তোমার দেয়া নির্বাসন দণ্ডে দণ্ডিত হয়েই আমি চলে গেলাম,
চলে গেলাম না ফেরার দেশে।
আর কোনও কালেও আমাদের দেখা হবে না,
ছোঁয়া হবে না তোমার ঠোঁটের তৃষ্ণাজল।
তোমার কপোল বেয়ে ওই যে নোনা নহর!
ওটা ভালোবাসা নয়,
আমি জানি ওটা তোমার অভিশপ্তের দহন।
তুমি ভালো থেকো,
এই যে আমি তোমার কাঁধে চড়েই চললাম।
আহা!
কী নিদারুণ প্রণয় সুগন্ধ তোমার তুমিতে,
আমি তোমার গন্ধ আমার কাফনের এপিটাফে তুলে নিলাম।
আর তোমাকে মুক্তি দিলাম,
মুক্তি দিলাম আমি নামক প্রণয় নুর থেকে।
এই তো আমি এবার তোমার শেষ স্পর্শ নিয়ে কবরে শুলাম,
তোমরা সকলে মিলে মুঠো মুঠো মাটিতে আমায় ঢেকে দিচ্ছো।
একটু একটু করে অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে চারপাশ,
এবং তুমিও।
আমি তোমার পায়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছি,
তুমি কেমন দ্রুতপায়ে চলে যাচ্ছো।
আমি ঠিক তোমায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি,
আমি তোমার আত্মার ছায়া শরীরের মানচিত্র আঁকছি।
অন্ধকারে তলিয়ে যেতে যেতে,
আমি কেবল তোমাকেই ভালোবাসছি।
All rights reserved Dainik chalonbiler kotha দৈনিক চলনবিলের কথা © 2020 ||
এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।