Dhaka , Saturday, 4 May 2024
www.dainikchalonbilerkotha.com
শিরোনামঃ

পাবনা জেলা কি জন্য বিখ্যাত?

পাবনা জেলা যে জন্য বিখ্যাত

ত্তরবঙ্গের সুপ্রাচীন বিখ্যাত ও পরিপূর্ণ এক শহর বৃহত্তর পাবনা।
পাবনা আমাদের দেশের রাজশাহী বিভাগের নান্দনিক জেলাগুলোর মাঝে একটি অঞ্চল। আয়তনের দিক থেকে এই জেলা প্রায় ২৩৭১.৫০ বর্গ কিমি। জেলাটির পশ্চিমে নাটোর জেলা, পূর্ব দিকে রয়েছে যমুনা নদী, দক্ষিণ দিকে রয়েছে পদ্মা নদী, উত্তরে সিরাজগঞ্জ জেলা।
দেশে তথা দেশের বাইরেও পাগলের শহর বলতে পাবনাকে বোঝায়। কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যান অনেকে। চলেন আজ দেখি আসি ঐতিহ্যের লীলাভূমি – পাবনা জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য অতি প্রাচীন, সুদীর্ঘ কালের চড়াই উৎরাই ভাঙা-গড়া, জয়-পরাজয় ও আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে এ জেলার জনপদ।সেই বিশেষত্বের দিক থেকে পাবনা জেলা ব্যতিক্রম। জেলার দুপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা ও যমুনার কারনে এই জেলাটি পেয়েছে অনন্য এক শৈল্পিক সৌন্দর্য। মানুষের জীবন ও জীবিকার প্রকারান্তরেও আছে ব্যাপক প্রাগৌতিহসিকতার ছাপ। চলনে বলনে নিজস্বতা যেন এই অঞ্চলের মানুষের স্বভাব।ফলে এখানকার মানুষের চেহারায়, আকৃতিতে, রক্তে, ভাষায় ও আচার আচরণে ঐতিহ্যের ছাপই শুধু বিদ্যমান নয়। বরং অনেক বৈশিষ্ট্য আজও কালের সাক্ষী হিসেবে দেদীপ্যমান। এই জেলায় একাধিক নদী ও খাল বিলের অবস্থানের জন্য অনেকে মনে করেন যে, ছয়/সাত শত বছর পূর্বে এই জেলা নদীগর্ভে নিমজ্জিত ছিল। যার ফলে এই অঞ্চলের অতি প্রাচীন কোনো কীর্তি দেখতে পাওয়া যায়না। যে কয়টি প্রাচীনকীর্তি দেখা যায় তা বৃহত্তর পাবনা জেলার নবগঠিত সিরাজগঞ্জ জেলায় অবস্থিত।
পাবনা জেলা ঘি, সন্দেশ , দই , প্যারডাইস সুইটস্ এর প্যারা( প্যারা একটি মিষ্টির      নাম ) বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। যার কারণে পাবনা জেলা বিখ্যাত সারা বাংলাদেশ জুরে।
প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারা এই জেলার মানুষ যেমন আতিথিয়েতায় পটু ঠিক তেমনই সব রকম পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতেও স্বাচ্ছন্দবোধ করে।
পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া সকল স্মৃতীর প্রতি সম্মান প্রর্দশনে এদের কোন জুড়ি নেই। নেই পরিকল্পিত জীবনযাপনের অনিচ্ছা। সদা হাস্যোজ্বল, পরোপকারী আর সরলতায় ভরপুর এই অঞ্চলের মানুষেরা শুধু জেলা কেন্দ্রিক নয় দেশের সকল জেলাতে যে কোন পরিবেশে নিজের যোগ্যতা প্রমানে পারদর্শি।
এই জেলার খাবারের তালিকায় স্থান করে নেয়া কিছু খাবার সারাদেশ ব্যাপী সমাদৃত। তার মাঝে পাবনা জেলা  গাওয়া ঘি, সন্দেশ , দই , প্যারডাইস সুইটস্ এর প্যারা(প্যারা একটি মিষ্টির নাম) বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে।
এ ছাড়াও পাবনা জেলার দর্শনীয় স্থানের ক্ষেত্রে যে গুলো উল্লেখযোগ্য তার তালিকা নিম্নে প্রদত্ত হইলো।
হার্ডিং ব্রীজ
পাবনা মানুষিক হাসপাতাল
ঈশ্বরদী বিমানবন্দর
ভাঁড়ারা শাহী মসজিদ
তাড়াশ বিল্ডিং
জোড় বাংলা মন্দির
ক্ষেতুপাড়া জমিদার বাড়ী
অনুকূল ঠাকুর টেম্পল (আশ্রম)
চলনবিলের সূর্যাস্ত
লালন শাহ সেতু
কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট
গাজনার বিল
তাঁত শিল্পেও এই জেলার বেশ অর্জন। দেশে হস্তচালিত তাঁতশিল্প মুখ থুবড়ে পড়লেও পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অর্ন্তগত আতাইকুলার তাঁত শিল্প এখান টিকে আছে। যার কারনেই পাবনা জেলার চাদর, লুঙ্গি ও গামছার কদর সারাদেশব্যাপী।
পাবনা জেলাটি ৯ টি উপজেলায় বিভক্ত  হলেও বোঝার উপায় নেই যে কোন উপজেলার বাসিন্দা। কথার ধাচ আর পোশাকে এই জেলার সকল উপজেলার মানুষকে একই মনে হয়। কথায় কিছুটা টান বোঝা যায় নদী উপকূলীয় মানুষের মাঝে।
পাবনার ভাষা : পাবনার এক অনবদ্য ও অন্যতম স্বকীয়তা হলো পাবনার ভাষা। নাটক,চলচ্চিত্র প্রায় সব খানেই আজকাল আমাদের ভাষার ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।
পাবনায় জন্মে যারা বিখ্যাত হয়েছেন-
১। জেনারেল জে় এন. চৌধুরী (সাবেক ভারতীয় সেনাপ্রধান)।
২। সাবেক বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ.কে. খন্দকার।
বাংলাদেশের সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী ও তিনি অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার
হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন।
৩। জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সুচিত্রা সেনকে কে না চেনেন। তার প্রেমে পড়েননি খুব কম মানুষই
আছেন। তিনিও কিন্তু পাবনাতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন।এটি পাবনা শহরেই মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাসভবন অবস্থিত। সম্প্রতি অবৈধ দখল হতে উদ্ধারক্রমে ইহা পর্যটকদের সংগ্রহশালা হিসেবে পিরিচিত লাভ করেছে। পর্যটকদের কাছে ইহা এখন দারুন আকর্ষণীয় স্থান।
৪। স্যামসন এইচ চৌধুরী। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্কয়ার
ফার্মাসিউটিক্যালস লি. এর প্রতিষ্ঠাতা।
৫। শ্যামলী পরিবহনের মালিক শ্রী গনেশ চন্দ্র ঘোষ।
পাবনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-
দেশের অন্যতম সরকারি মেডিকেল কলেজ , পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা জিলা স্কুল, পাবনা ক্যাডেট কলেজ, পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, সরকারি এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়।
অনেক সংক্ষেপে শেষ করলাম আর কী। পাবনাকে নিয়ে কথা বলতে গেলে শেষ হবে না । কেমন লাগল পাবনা? আগেই বলেছি আমরা পাবনাবাসী খুবই আন্তরিক। পাগলের শহরকে চিনে তো গেলেন আবার আইসেন।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে ভাঙ্গুড়া বিএনপির লিফলেট বিতরণ

পাবনা জেলা কি জন্য বিখ্যাত?

আপডেটের সময় 12:58 am, Sunday, 18 December 2022

পাবনা জেলা যে জন্য বিখ্যাত

ত্তরবঙ্গের সুপ্রাচীন বিখ্যাত ও পরিপূর্ণ এক শহর বৃহত্তর পাবনা।
পাবনা আমাদের দেশের রাজশাহী বিভাগের নান্দনিক জেলাগুলোর মাঝে একটি অঞ্চল। আয়তনের দিক থেকে এই জেলা প্রায় ২৩৭১.৫০ বর্গ কিমি। জেলাটির পশ্চিমে নাটোর জেলা, পূর্ব দিকে রয়েছে যমুনা নদী, দক্ষিণ দিকে রয়েছে পদ্মা নদী, উত্তরে সিরাজগঞ্জ জেলা।
দেশে তথা দেশের বাইরেও পাগলের শহর বলতে পাবনাকে বোঝায়। কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যান অনেকে। চলেন আজ দেখি আসি ঐতিহ্যের লীলাভূমি – পাবনা জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য অতি প্রাচীন, সুদীর্ঘ কালের চড়াই উৎরাই ভাঙা-গড়া, জয়-পরাজয় ও আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে এ জেলার জনপদ।সেই বিশেষত্বের দিক থেকে পাবনা জেলা ব্যতিক্রম। জেলার দুপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা ও যমুনার কারনে এই জেলাটি পেয়েছে অনন্য এক শৈল্পিক সৌন্দর্য। মানুষের জীবন ও জীবিকার প্রকারান্তরেও আছে ব্যাপক প্রাগৌতিহসিকতার ছাপ। চলনে বলনে নিজস্বতা যেন এই অঞ্চলের মানুষের স্বভাব।ফলে এখানকার মানুষের চেহারায়, আকৃতিতে, রক্তে, ভাষায় ও আচার আচরণে ঐতিহ্যের ছাপই শুধু বিদ্যমান নয়। বরং অনেক বৈশিষ্ট্য আজও কালের সাক্ষী হিসেবে দেদীপ্যমান। এই জেলায় একাধিক নদী ও খাল বিলের অবস্থানের জন্য অনেকে মনে করেন যে, ছয়/সাত শত বছর পূর্বে এই জেলা নদীগর্ভে নিমজ্জিত ছিল। যার ফলে এই অঞ্চলের অতি প্রাচীন কোনো কীর্তি দেখতে পাওয়া যায়না। যে কয়টি প্রাচীনকীর্তি দেখা যায় তা বৃহত্তর পাবনা জেলার নবগঠিত সিরাজগঞ্জ জেলায় অবস্থিত।
পাবনা জেলা ঘি, সন্দেশ , দই , প্যারডাইস সুইটস্ এর প্যারা( প্যারা একটি মিষ্টির      নাম ) বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। যার কারণে পাবনা জেলা বিখ্যাত সারা বাংলাদেশ জুরে।
প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারা এই জেলার মানুষ যেমন আতিথিয়েতায় পটু ঠিক তেমনই সব রকম পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতেও স্বাচ্ছন্দবোধ করে।
পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া সকল স্মৃতীর প্রতি সম্মান প্রর্দশনে এদের কোন জুড়ি নেই। নেই পরিকল্পিত জীবনযাপনের অনিচ্ছা। সদা হাস্যোজ্বল, পরোপকারী আর সরলতায় ভরপুর এই অঞ্চলের মানুষেরা শুধু জেলা কেন্দ্রিক নয় দেশের সকল জেলাতে যে কোন পরিবেশে নিজের যোগ্যতা প্রমানে পারদর্শি।
এই জেলার খাবারের তালিকায় স্থান করে নেয়া কিছু খাবার সারাদেশ ব্যাপী সমাদৃত। তার মাঝে পাবনা জেলা  গাওয়া ঘি, সন্দেশ , দই , প্যারডাইস সুইটস্ এর প্যারা(প্যারা একটি মিষ্টির নাম) বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে।
এ ছাড়াও পাবনা জেলার দর্শনীয় স্থানের ক্ষেত্রে যে গুলো উল্লেখযোগ্য তার তালিকা নিম্নে প্রদত্ত হইলো।
হার্ডিং ব্রীজ
পাবনা মানুষিক হাসপাতাল
ঈশ্বরদী বিমানবন্দর
ভাঁড়ারা শাহী মসজিদ
তাড়াশ বিল্ডিং
জোড় বাংলা মন্দির
ক্ষেতুপাড়া জমিদার বাড়ী
অনুকূল ঠাকুর টেম্পল (আশ্রম)
চলনবিলের সূর্যাস্ত
লালন শাহ সেতু
কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট
গাজনার বিল
তাঁত শিল্পেও এই জেলার বেশ অর্জন। দেশে হস্তচালিত তাঁতশিল্প মুখ থুবড়ে পড়লেও পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অর্ন্তগত আতাইকুলার তাঁত শিল্প এখান টিকে আছে। যার কারনেই পাবনা জেলার চাদর, লুঙ্গি ও গামছার কদর সারাদেশব্যাপী।
পাবনা জেলাটি ৯ টি উপজেলায় বিভক্ত  হলেও বোঝার উপায় নেই যে কোন উপজেলার বাসিন্দা। কথার ধাচ আর পোশাকে এই জেলার সকল উপজেলার মানুষকে একই মনে হয়। কথায় কিছুটা টান বোঝা যায় নদী উপকূলীয় মানুষের মাঝে।
পাবনার ভাষা : পাবনার এক অনবদ্য ও অন্যতম স্বকীয়তা হলো পাবনার ভাষা। নাটক,চলচ্চিত্র প্রায় সব খানেই আজকাল আমাদের ভাষার ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।
পাবনায় জন্মে যারা বিখ্যাত হয়েছেন-
১। জেনারেল জে় এন. চৌধুরী (সাবেক ভারতীয় সেনাপ্রধান)।
২। সাবেক বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ.কে. খন্দকার।
বাংলাদেশের সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী ও তিনি অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার
হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন।
৩। জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সুচিত্রা সেনকে কে না চেনেন। তার প্রেমে পড়েননি খুব কম মানুষই
আছেন। তিনিও কিন্তু পাবনাতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন।এটি পাবনা শহরেই মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাসভবন অবস্থিত। সম্প্রতি অবৈধ দখল হতে উদ্ধারক্রমে ইহা পর্যটকদের সংগ্রহশালা হিসেবে পিরিচিত লাভ করেছে। পর্যটকদের কাছে ইহা এখন দারুন আকর্ষণীয় স্থান।
৪। স্যামসন এইচ চৌধুরী। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্কয়ার
ফার্মাসিউটিক্যালস লি. এর প্রতিষ্ঠাতা।
৫। শ্যামলী পরিবহনের মালিক শ্রী গনেশ চন্দ্র ঘোষ।
পাবনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-
দেশের অন্যতম সরকারি মেডিকেল কলেজ , পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা জিলা স্কুল, পাবনা ক্যাডেট কলেজ, পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, সরকারি এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়।
অনেক সংক্ষেপে শেষ করলাম আর কী। পাবনাকে নিয়ে কথা বলতে গেলে শেষ হবে না । কেমন লাগল পাবনা? আগেই বলেছি আমরা পাবনাবাসী খুবই আন্তরিক। পাগলের শহরকে চিনে তো গেলেন আবার আইসেন।